• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

কয়লা চোরাকারবারি ও চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্য আনোয়ারপুর বাজার

  • ''
  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০২৪

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

কয়লা চোরাকারবারি ও চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে আনোয়ারপুর বাজার। দীর্ঘদিন ধরে এ বাজারের উত্তর দিকের অংশ (নদীর পাড় ঘেঁষে যাদুকাটা ও রক্তি নদী পার-ফতেহপুর সড়কে) মিলে মিশে চলছে অবৈধ কার্যক্রম। দিনে যেমন তেমনি রাতে পাল্টে যায় এখানকার দৃশ্য। যেন শিল্প নগরীর মত কয়লা চোরাই পণ্যবাহী গাড়ি দাপিয়ে বেড়ায় সড়কে। তেমনি নদী পথেও বসে চোরাই কয়লার নৌকার মিলন মেলা।

আর নদীর পাড়েই সেই কয়লার ডিপু করে রেখেছে সংঘবদ্ধরা। এই বিষয়টি বর্তমানে ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও কেউ যেন এর দায় নিচ্ছে না। সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার বালি-জুরী ইউনিয়নের আনোয়াপুর বাজারের সাথে ব্রিজের পাশে (আনোয়ারপুর-ফতেহপুর সড়কে) এলাকায় এমনি ঘটনা ঘটছে।

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসাইন এই বিষয়টি তুলে ধরলে এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অদৃশ্য কারণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বন্ধ হচ্ছে না এসব চোরাচালান ও চাঁদাবাজি এবং তাদের নৈপত্তে থাকা রাঘব বোয়ালরাও থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে,সরকারের রাজস্ব বঞ্চিত করে সীমান্তের দায়িত্বশীলদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে সীমান্তের বিভিন্ন চোরাই পথ দিয়ে সীমান্তের চিহ্নিত চোরাচালানীরা ভারতীয় কয়লা বাংলাদেশে আনছে। পরে নৌপথে এনে ট্রাকে করে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেয় একটি ব্যবসায়ী নামধারী চক্র। আনোয়ারপুর বাজার থেকে প্রতিদিন ১০-১২টি কোন দিন আরও বেশি কয়লার নৌকা ঘাটে আসে। পরে নৌকা থেকে এই এলাকার আশ পাশে ডিপুর মত করে মজুদ করে রাখা হয় আবার প্রতিদিন ১০-১৫টি ট্রাক লোড হয় এই এলাকা থেকে। প্রতিটি ট্রাকে ২০-২২টন কয়লা লোড করা হয় যার মূল্য ৪-৫লাখ টাকা সে হিসেবে দৈনিক প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বেশী প্রতিদিন কয়লা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। আর সেই ট্রাক থেকে স্থানীয় ৭-৮জনের একটি চাঁদাবাজ চক্র মোটা অংকের চাঁদা উত্তোলন করছে। কিন্তু কেউই এর প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না কারণ এই চাঁদাবাজ ও কয়লার সিন্ডিকেট স্থানীয় প্রভাবশালী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে আরও জানাযায়,উপজেলায় তিনটি শুল্ক ষ্টেশন রয়েছে। এলসির মাধ্যমে কয়লা চুনা পাথর আমদানি করে ৮শতাধিক ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকা দিয়ে সীমান্তের চিহ্নিত চোরাচালানীরা অবৈধ ভাবে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কয়লা পাচার করতে তাহিরপুর উপজেলার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার এক সাংবাদিকের মাধ্যমে উপজেলা ও জেলার কর্মরত ৩৫জন সাংবাদিক,পুলিশ,বিজিবি,র‌্যাব,স্থানীয় চাঁদাবাজ চক্রকে ম্যানেজ করে চোরাচালান চলিয়ে যাচ্ছে এই বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বৈধ কয়লা ব্যবসায়ী গন।

কয়লা লোড আনলোডের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান,ভাই আমরা শ্রমিক। টাকার বিনিময়ে এই কয়লা লোড আনলোড করি। তবে কয়লা গুলো অবৈধ ভাবে চোরাই পথে আনা তা শুনি। দিনে কম হলেও ১০ থেকে ১২ ট্রাক লোড করি কোনো দিন আরও বেশী।

আমিন মিয়া,সাকিল আহমেদসহ স্থানীয় সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান,চোরাকারবার বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ। অবৈধ ব্যবসা দেশের অর্থনীতি ও আইন শৃঙ্খলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানান তারা। সীমান্তে চোরাচালন বন্ধে সরকারের তৎপরতা কামনা করছেন তারা।

সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাদিক ও সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বকত সম্প্রতি একটি সভায় উদ্বেগ জানিয়ে বলেন,ইদানীং চোরাকারবারিদের জোনে পরিণত হয়েছে। আগে এমনটা ছিলনা। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো এই ব্যবসার সাথে আমাদের তরুণ ছেলেরা যুক্ত হয়ে পড়ছে। এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। আমি এ নিয়ে জেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কথা বলেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সকল শ্রেণীর লোকদের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।

২৮ বিজিবির পরিচালক লেঃ কর্নেল মাহবুবুর রহমান বলেন,আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকার পরও সীমান্তে চোরাচালান রোধে বিজিবি অনেক তৎপর। প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হচ্ছে। চোরাচালান বন্ধে জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের স্বোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্ জানান,চোরাচালান বন্ধে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বিশেষ করে আঞ্চলিক সড়কে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জেলায় আমরা বড় বড় চালান জব্দ করেছি। এসব কাজে সীমান্তের গুটি কয়েক লোক জড়িত রয়েছে। চোরাচালানের সাথে কোন পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads